শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন
রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) : সকালে ঘাসের ডগায় শিশির ভেজা মুক্তকণা জানান দিচ্ছে শীতের। শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে বানিয়াচংয়ে লেপ-তোষক প্রস্তুুতকারী কারিগরদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। উপজেলার লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তাদের পাশাপাশি বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরাও। দিন যতই গড়াচ্ছে শীতের প্রকোপ ততই বেশি বাড়ার আশংকায় উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ নতুন নতুন লেপ তৈরি করছে। বছরের অন্যান্য সময় বেচাকেনা কম হলেও শীত মৌসুমে বিক্রি কয়েক গুন বেড়ে যায়। বাজারে কম্বলের তুলনায় লেপের দাম কম হওয়ায় চাহিদা বেশি। তুলা পিটিয়ে তা রঙ বেরঙের কাপড়ের তৈরি লেপ-তোষকের কাভারে মুড়িয়ে সুই-সুতার ফোড়ে তৈরি করা হয় লেপ। খুব দ্রুত শীত নিবারণে উপযোগী এটি। শীতের তীব্রতা বাড়লে লেপতোষক তৈরি ও বিক্রি হয় বেশি। মাত্র ২-৩ মাসের শীত মৌসুমে উপজেলার অর্ধশত দক্ষ কারিগর লেপ-তোষক তৈরি করে পারিশ্রমিকের সঞ্চয় দিয়ে সারা বছর সংসার চালান।
জানা গেছে, অধিক মুনাফা ও বেশি বিক্রির আশায় দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কারিগর এবং ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারাও লেপ-তোষক তৈরির জন্য ভিড় করছেন। শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে অর্ডার নিলেও যথা সময়ে সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে কারিগররা। এবার তুলার দাম একটু বেশি। কালার তুলা প্রতিকেজি ৩৫ টাকা, মিশালী তুলা ২০ টাকা, সিম্পল তুলা ৭০ টাকা, শিমুল তুলা ২৭০ টাকা ও সাদা তুলা ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন একজন কারিগর ৬ থেকে ৮ টি লেপ তৈরি করেন। মাঝারি ধরনের একটি লেপ বানাতে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। তোষক বানাতে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। তবে তুলার প্রকারভেদে লেপ-তোষকের দাম কম-বেশি হয়। এছাড়া দিন-দিন জিনিষপত্রের দাম বেশি হওয়ায় লেপের দাম বেড়ে গেছে। লেপ তৈরি করতে আসা ক্রেতা উপজেলার চমকপুর গ্রামের রুহুল আমিন, কাগাপাশা গ্রামের কৃষ্ণ সাহা ও মুরাদপুর গ্রামের সারোয়ার জানান, শীতের কারণে লেপ-তোষকের কারিগররা খুব ব্যস্ত। বেশি বেশি লেপ-তোষক তৈরি করছেন সাধারণ মানুষ। এ কারনে প্রকারভেদে লেপ-তোষকের দামেরও কম-বেশি হচ্ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। লেপ- তোষক তৈরির কারিগর আবুল কালাম, ফরিদুল, ফারুক হোসেন ও আরমান হোসেন জানান, প্রতি বছর শীতের শুরু থেকে ক্রেতারা লেপ তোষকের দোকানে আসতে থাকেন। শীতের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। তারা আরো জানান, সারা বছর তেমন একটা ব্যবসা হয় না। পুরো বছরের ব্যবসা শীতের এই ২-৩ মাসে করতে হয়। শীতের সময় ছাড়া বিয়ে-সাদিতে লেপ তোষক বিক্রয় হয়। শীত মৌসুমে তাদের ব্যাপক শ্রম দিতে হয়। কাজ করতে অনেক দিন-রাত পেরিয়ে যায়, থাকে না খাবার সময়ও। প্রকারভেদে লেপ-তোষক তৈরির মজুরি ২০০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত হয়। আগের তুলনায় ব্যবসায় প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে। তাই সামান্য লাভেই ক্রেতা সাধারনের কাজ করে দিতে হয়।